মঙ্গলবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৫

গাউছুল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি আল্লাহ পাক-এর যমীনে এক বেমেছাল দৃষ্টান্ত॥ ওলীআল্লাহগণ ব্যতীত পৃথিবীতে এক ফোঁটা রহমত এবং ইসলাম আবাদ কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।

মহান রব্বুল আলামিন ইরশাদ করেন-
لقد من الله على المومنين اذ بعث  فيهم رسولا من انفسهم يتلوا عليهم ايته ويزكيهم ويعلمهم الكتب والحكمة وان كانوا من قبل لفى ضلل مبين.
মু’মিনগণের প্রতি আল্লাহ পাক উনার ইহসান যে, তাদের মধ্য হতে তাদের জন্য একজন রসূল প্রেরণ করেছেন। যিনি আল্লাহ পাক-এর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে শুনাবেন, তাদেরকে তাযকিয়া (পরিশুদ্ধ) করবেন এবং কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন। যদিও তারা পূর্বে হেদায়েত প্রাপ্ত ছিল না।” (সূরা ইমরান/১৬৪ অনুরূপ সূরা বাকারা ২৯, ১৫১, সূরা জুমুয়া ২নং)
অর্থাৎ যুগে যুগে মানুষের কল্যাণের জন্য এবং ঈমান, আমল আক্বীদা হিফাযতের জন্য আল্লাহ পাক ১,২৪,০০০ মতান্তরে ২,২৪,০০০ নবী-রসূল আলাইহিমুস সালামগণ এসেছিলেন। উনাদের পরে উনাদের স্থলাভিষিক্ত তথা নায়েবে নবী-রসূল হিসেবে আল্লাহ পাক উনার মনোনীত ওলীআল্লাহগণকে যুগে যুগে সেই মহান নেয়ামত হাছিলের জন্য প্রেরণ করেছেন। (সুবহানাল্লাহ)
উল্লেখ্য যে, বর্তমান যুগে কিছু নামধারী তথা ধর্মব্যবসায়ী মোল্লারা বলে থাকে ওলীআল্লাহ বা পীর কোরআন হাদীছের কোথাও নেই। সুতরাং এটা বেদয়াতীপন্থা। নাউযুবিল্লাহ। আমি তাদেরকে বলতে চাই। কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ কতটুকুই বা পড়েছেন? আর আপনি যে ইসলামের বুলি মুখে আওরাতে চাচ্ছেন এই ইসলামী ধ্যান-ধারণা আপনি পেয়েছেন কোথায়? নিশ্চয়ই আপনাকে মুখে স্বীকার না করলেও অন্তরে অবশ্যই শিকার করতে হবে কোন না কোন ওলীআল্লাহ থেকে। যদি না স্বীকার করেন তাহলে কি আপনি নবী? (নাউযুবিল্লাহ)। আপনার ক্ষুদ্র ইসলামী বোধটুকু যদি ওলীআল্লাহগণ থেকে নাই পেলেন তাহলে সরাসরি আল্লাহ পাক ওহী করে কি জানিয়েছেন? যদি আপনি এমনটি বিশ্বাস করেন তাহলে মনে রাখবেন “আপনি নব্য নবী তথা কাফির”। যেটা আপনারই কথামত।
আর যদি বলতে চান হাদীছ শরীফ থেকে তাহলেও একই কথা। রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে কি আপনি দেখেছেন? উনার হাদীছ শরীফ সরাসরি (কোন আওলীয়ায়ে কিরাম উনাদের মুবারক জবানিতে অথবা উনাদের লিখিত কিতাবাদী ছাড়া) পেয়েছেন? হ্যাঁ দাবী করলেও আপনি হবেন কাট্টা মিথ্যাবাদী। কারণ আপনি ছাহাবী নন। একমাত্র হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু আনহুমগণই সরাসরি হাদীছ শরীফ শুনেছেন।
তারপরেও যদি আপনি বলতে চান যে, আমি বুখারী শরীফ অথবা অন্যান্য ছহীহ হাদীছ শরীফ পড়ের জেনেছি অথবা জানব। তাহলেও প্রমাণিত হবে আপনি একটা গণ্ড মূর্খ এবং প্রতারক। কারণ বুখারী শরীফ অথবা অন্যান্য হাদীছ শরীফের কিতাব সম্পর্কে আপনার কোন সাধারণ জ্ঞানটুকও নেই। মূলতঃ বুখারী শরীফ মানলে আমার এত দীর্ঘ আলোচনার প্রয়োজন ছিল না। কারণ বুখারী শরীফ যিনি লিখেছেন উনী একজন হক্কানী রব্বানী ওলীআল্লাহ। তাহলে আপনাকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে ইসলামের বুলি যতটুকুই শিখেন তা শিখেছেন আল্লাহপাক উনার মহান ওলী, বিশিষ্ট ইমাম হযরত ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে অথবা অন্য কোন ইমাম তথা ওলীআল্লাহগণ থেকে।
তাহলে ষ্পষ্ট প্রমাণিত হল হক্কানী ওলীআল্লাহগণ এবং ইমাম মুজতাহিদগণ ব্যতীত ইসলামের কোন বিষয় জানা কারোপক্ষে কস্মিনকালেও সম্ভব নয়।
এখন আসি কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ এ ওলীআল্লাহগণের কথা আছে কি না।
মূলতঃ কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফের অসংখ্য স্থানে ওলীআল্লাহগণের প্রয়োজনীয়তা, তাদের অনুসরণের অবশ্যকতার কথা এসেছে। যা বর্ণনা করতে গেলে অনেক সময় লেগে যাবে, আমি ২/৪টি তুলে ধরছি যা প্রমাণিত হবে যে ওলীআল্লাহগণের অনুসরণ করা ফরজের অন্তর্ভুক্ত।

১. কুরআন শরীফের সূরা নিসা ৫৯নং আয়াত শরীফ-
اطيعوا الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم
অর্থঃ (আল্লাহ পাক আদেশ করেন) তোমরা আল্লাহ পাক এর অনুসরণ কর (যদি সম্ভব না হয় তাহলে) ওনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ কর (যদি সেটাও সম্ভব না হয় তাহলে) ইমাম-মুজতাহীদ তথা ওলীআল্লাহগণের অনুসরণ করুন (এর পরে আর কোন রাস্তা নেই)।
অনুসরণ বলতে দেখে দেখে আমল করা, কিভাবে নামায পড়তে হবে, খেতে হবে, হাঁটতে হবে, চলতে হবে, সর্বাবস্থায় দেখে দেখে আমল করাই হচ্ছে অনুসরণ-অনুকরণ, এতায়াত। আলোচ্য আয়াতে বর্তমানে কোন ব্যক্তির পক্ষে আল্লাহ পাক এবং উনার রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অনুসরণ করা সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব সেটা হচ্ছে তৃতীয় স্তর তথা ওলীআল্লাহগণের অনুসরণ। এটা আল্লাহ পাক উনারই আদেশ। কে এই আদেশ অমান্য করতে পারবে???
২. কুরআন শরীফের সূরা কাহাফ ১৭ আয়াত শরীফে এসেছে-
من يهد الله فهو المهتد ومن يضلل فلن تجد له وليا مرشدا
আল্লাহ পাক যাঁকে হিদায়েত দান করেন, সেই হেদায়েত পায়। আর যে ব্যক্তি গোমরাহীর মধ্যে দৃঢ় থাকে, তার জন্য কোন ওলীয়ে মুর্শিদ (وليا مرشدا) তথা কামিল পীর পাবেন না।
অর্থাৎ স্পষ্ট বুঝা গেল আল্লাহ পাকই তাদের পরিচয় দিলেন যারা গোমরাহ তারা কামিল পীর তথা ওলীআল্লাহগণকে চিনবে না মানবে না।
৩. কুরআন শরীফের সূরা ইউনুস এর ৬২নং আয়াত শরীফে এসেছে-
الا ان اولياء الله لا خوف عليهم ولاهم يحزنون
অর্থঃ নিশ্চয়ই ওলীআল্লাহগণের (اولياء الله) কোন ভয় নেই পেরেশানী নেই। সুবহানাল্লাহ

তাহলে কার সাধ্য আছে উক্ত  আয়াত শরীফকে অস্বীকার করবে। হ্যাঁ সম্ভব যারা কাফির তারা আল্লাহ পাক-এর আয়াত শরীফ অস্বীকার করতে দিধাবোধ করবে না।

মিশকাত শরীফের হাদীস শরীফে এসেছে, “প্রত্যেক মুসলমানদের জন্য ইলম অর্জন করা হচ্ছে ফরজ।” “ইলম দু;প্রকার, একটা হচ্ছে ইলমে ফেকাহ আরেকটা হচ্ছে ইলমে তাছাউফ আর সেই ইলমে তাছাউফকে উপকারী ইলম বলা হয়েছে।” দুটাই অর্জন করা ফরজ।
আর ইলমে তাছাউফের জন্য দরকার পীর ছাহেব বা শায়খের গ্রহণ করা। বড় বড় ইমাম মুজতাহিদ যেনারা ছিলেন উনারা প্রত্যেকই পীর ছাহেব গ্রহণ করেছেন এবং মাযহাবের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। যেমন হযরত ইমাম আ’যম আবু হানীফা রহমতুল্লাহি আলাইহি। উনি নিজেই বলেছেন যা ফতওয়ায়ে ছিদ্দিকীয়াতে এসেছে, সাইফুল মুকাল্লিদীন কিতাবে এসেছে,
لولا سنتان لهلك ابونعمان
যদি আমি দু’টি বছর না পেতাম অর্থাৎ দু’ বছরে দুজন পীরের কাছে বাইয়াত হয়েছিলেন, প্রথমে ইমাম বাকের রহমতুল্লাহি আলাইহি অতপর উনার ইন্তেকালের পর উনার ছেলে ইমাম জাফর সাদিক রহমতুল্লাহি আইলিম।
দুররুল মুখতার কিতাবে এসেছে একটা উসুল বর্ণনা করা হয়েছে- সেটা হচ্ছে,
ما لا يتم به الفرض فهو فرض
যে আমল ব্যতীত কোন ফরজ পূর্ণ হয় না সে ফরজ পূর্ণ করার জন্য ঐ আমল করাও ফরজ।
من ليس له شيخ فشيخه شيطان
যাদের পীর ছাহেব নেই তার পীর ছাহেব বা পথ প্রদর্শক হবে শয়তান। শয়তান তাকে গোমরাহ করবেই।

তাহলে আরেকটি বিষয় স্পষ্ট হল যার পীর ছাহেব নেই বা যারা পীরের বিরুদ্ধে বলবে তাদের পীর হচ্ছে শয়তান। যার কারণেই তারা কুরআন শরীফ দ্বারা প্রমাণিত আওলীয়ায়ে কিরামগণের বিরুদ্ধে বলে থাকে।

আসলে যারা ওলীআল্লাহগণের বিরুধিতা করবে তাদের সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে এসেছে,
من عاد لوليا فقد اذنته بالحرب
যে ব্যক্তি আমার ওলীগণের বিরুধিতা করবে আমি আল্লাহ পাক তার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণ করি।

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, গাউছুল আ’যম, হযরত বড়পীর ছাহেব রহমতুল্লহি আলাইহিম উনি আল্লাহ পাক উনার মাহবুব ওলী।
অনুরূপভাবে বর্তমান যামানায় যিনি গাউছুল আযম, মুজাদ্দিদে আ’যম, আওলাদে রসূল ঢাকা রাজারবাগ শরীফের হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিওয়া সাল্লাম। উনিও বর্তমান যামানায় আল্লাহপাক উনার একমাত্র মাহবুব এবং বেমেছাল ওলী। যিনি আমাদের জন্য আল্লাহ পাক উনার পক্ষ থেকে নেয়ামতে কুবরা। যারাই উনার বিরুদ্ধে বলবে তারা নিশ্চিত হালাক তথা ধ্বংস হবে।
আমি সমস্ত মুসলিম উম্মাহকে উনার কদম মুবারকে আসার আহবান করছি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন