শুক্রবার, ৬ মার্চ, ২০১৫

সাইয়্যিদুল আউলিয়া, মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী, গাউছুল আ’যম, মুজাদ্দিদুয যামান, ইমামুর রাসিখীন, সুলত্বানুল আরিফীন, মুহিউদ্দীন, আওলাদে রসূল সাইয়্যিদুনা হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক


وصال (বিছাল) অর্থ মিলিত হওয়া, সাক্ষাৎ করাহযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহি উনারা মারা যান নাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত আছে-
ان اولياء الله لا يموتون بل ينتقلون من دار الفناء الى دار البقاء

অর্থ: নিশ্চয়ই আউলিয়ায়ে কিরাম উনারা মৃত্যুবরণ করেননাবরং উনারা অস্থায়ী আবাস থেকে স্থায়ী আবাসের দিকে ফিরে যানমহান আল্লাহ পাক উনার এবং উনার হাবীব, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সাথে দায়িমী ও হাক্বীক্বী সাক্ষাৎ মুবারকে মিলিত হনএজন্য উনাদের ইন্তিকালকে পবিত্র বিছালী শান মুবারক বলা হয়আর হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম উনাদের তাযীম বা সম্মানার্থে শরীফ কিংবা মুবারক শব্দটি সংযুক্ত করা হয়যেহেতু নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিন ইরশাদ মুবারক করেন, “মুসলমানরা যতক্ষণ পর্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি বা বিষয়ের যথার্থ সম্মান প্রদর্শন করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তারা বিজয় বেশে কামিয়াবী লাভ করবেআর যখন সম্মান ইজ্জত প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকবে তখন হালাক বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে
মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
كل نفس ذائقة الـموت. ثم الينا ترجعون
অর্থ: প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবেঅতঃপর আমার কাছে ফিরে আসবে। (পবিত্র সূরা আনকাবুত: পবিত্র আয়াত শরীফ ৫৭)
আমরা পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, এই প্রত্যাবর্তন সকলের জন্য সমান নয়হযরত আউলিয়ায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা মহান আল্লাহ পাক উনার বন্ধুউনাদের বিদায় বা বিছালী শান মুবারক বিশ্ববাসীর জন্য ইবরত-নছীহতপূর্ণযা বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণগাউছুল আযম, সাইয়্যিদুল আউলিয়া হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র জীবনী মুবারকে তার যথার্থ প্রতিফলন ঘটেছেউনার বিলাদতী শান মুবারক উনার দিনটি যেমন বিশ্ববাসীর হিদায়েত তথা সঠিক পথের দিক নির্দেশক ছিলতেমনি পবিত্র বিছালী শান মুবারক উনার দিনটিও ছিল বিশ্ববাসীর জন্য হিদায়েতের কারণ

যখন হযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার পবিত্র বিছালী শান মুবারক উনার সময় নিকটবর্তী হয়ে গেল তখন উনার ইস্তিঞ্জা মুবারক উনার রাস্তা দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হতে লাগলশুধু তাই নয়, ইস্তিঞ্জা থেকে আতর গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছিল এবং তার মধ্য থেকে যিকিরও হচ্ছিলসুবহানাল্লাহ! উনার মুরীদ-মুতাক্বিদ যাঁরা ছিলেন উনারা বললেন, হুযূর! আপনার শরীর অসুস্থ আপনাকে চিকিৎসা করানো দরকারহযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন আবদুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি প্রথমে বললেন, দেখ চিকিৎসা করে কি হবে, যিনি সমস্ত চিকিৎসকের চিকিৎসক, সমস্ত হাকীমগণের হাকীম সেই মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তিনি আমাকে অসুখ দিয়েছেনকাজেই আমার এই অসুখ সারা দুরূহ ব্যাপারআমার হায়াত মুবারক শেষ হয়ে গিয়েছেআমি থাকতে পারবো না এখানেতথাপিও মুরীদদের আশা উনারা বললেন, হুযূর! আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে আমরা চিকিৎসা করিতিনি চিন্তা করলেন সত্যিই চিকিৎসা করাতো সুন্নত, অসুবিধা নেই ঠিক আছে নিয়ে যাও আমার প্রস্রাব মুবারকনিয়ে যাওয়া হলো গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক একটি পাত্র করে এক বিধর্মী ডাক্তারের কাছেপবিত্র দ্বীন ইসলাম সম্বন্ধে সেই ডাক্তারের তেমন জানাশোনা নেই, হয়তো সামান্য কিছু জানেযখন গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারক সেই বিধর্মী ডাক্তারের কাছে পেশ করা হলো, ডাক্তার আশ্চার্য হয়ে মনে মনে চিন্তা করতে লাগলসে প্রথমে বুঝতেই পারলো না এটা প্রস্রাবডাক্তার জিজ্ঞেস করলআপনারা এটা কি নিয়ে এসেছেন, এতো আতর-গোলাপের ঘ্রাণ বের হচ্ছে এবং মনে হচ্ছে এখান থেকে মহান আল্লাহ পাক উনার যিকির হচ্ছেতখন গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুরীদ-মুতাক্বিদগণ বললেন, ডাক্তার সাহেব মূলত এটা হযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার প্রস্রাব মুবারকশুনে ডাক্তার সাহেব আশ্চর্য হয়ে বলল, চিকিৎসা পরে হবেতার আগে আমাদেরকে তওবা করানপ্রথমে মুসলমান করানসেই মহল্লায় ছিল চারশত বিধর্মী লোকতারা তওবা করে মুসলমান হয়ে গেলসুবহানাল্লাহ!
ফিরে এসে তারা হযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার কাছে জিজ্ঞেস করলেনহে গাউছ ূল আযম রহমতুল্লাহি আলাইহি! কি কারণে আপনার এই অবস্থা এবং ইস্তিঞ্জা মুবারকের এই হাল? তখন গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহীউদ্দিন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক উনার একটা পবিত্র আয়াত শরীফযেটা তিলাওয়াত করার কারণে আমার ভিতরের কলিজা-গুর্দা সব চূর্ণবিচূর্ণ ও তছনছ হয়ে গিয়েছেযেগুলো ইস্তিঞ্জা মুবারক উনার রাস্তা দিয়ে রক্ত আকারে বের হয়ে যাচ্ছেউনারা জিজ্ঞাসা করলেন, কোন সে পবিত্র আয়াত শরীফ যা আপনার কলিজা-গুর্দা তছনছ করে দিয়েছে? গাউছুল আযম হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-
يايها الذين امنوا اتقوا الله حق تقته ولا تموتن الا وانتم مسلمون
অর্থ: হে ইমানদারগণ! তোমরা মহান আল্লাহ্ পাক উনাকে ভয় করার মতো ভয় করোঅর্থাৎ হাকীক্বীভাবে ভয় করোতোমরা মারা যেও না মুসলমান না হওয়া পর্যন্ত” (পবিত্র সূরা আলে ইমরান শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১০২)
হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বললেন, এই পবিত্র আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করার পর আমার ভয় হচ্ছিল আমি প্রকৃত মুসলমান হতে পেরেছি কিনাযেটা চিন্তা ফিকিরের কারণে আমার ভিতরের কলিজা, গুর্দা আর যা কিছু আছে সব তছনছ হয়ে রক্ত আকারে আমার ইস্তিঞ্জার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাচ্ছে
বাহজাতুল আসরার নামক কিতাবে হযরত শায়েখ শিহাবুদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দি রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ৫৬০ হিজরী সনের পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস হতে কঠিন মারিদ্বী শান গ্রহণ করেনমাশারিকে আউলিয়ানামক কিতাবে শায়েখ আব্দুল ফতেহ্ বাগদাদী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, ইয়াওমুল আহাদ বা রোববার দিবাগত রাতে অর্থাৎ লাইলাতুল ইছনাইনিল আযীম বা সোমবার শরীফ রাতে গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন হযরত বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি গোসল করেনগোসলান্তে ইশার নামায পড়ে তিনি উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের গুনাহ্খাতা মাফ ও খাছ রহ্মতের জন্য দোয়া করলেনএরপর গায়েব হতে আওয়াজ আসল-
يايتها النفس الـمطمئنة. ارجعى الى ربك راضية مرضية. فادخلى فى عبادى. وادخلى جنتى.

অর্থ: হে প্রশান্ত নফ্স, আপনি প্রসন্ন ও সন্তুষ্টচিত্তে এবং সন্তুষ্টি প্রাপ্ত হয়ে নিজ প্রতিপালক উনার দিকে প্রত্যাবর্তন করুনআপনি আমার নেক্কার বান্দার মধ্যে শামিল হয়ে যান এবং বেহেশ্তে প্রবেশ করুন” (পবিত্র সূরা আল ফজর শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ৩০)
এরপর তিনি পবিত্র কালিমা শরীফ পাঠ করে তাআজ্জাজা (অর্থ বিজয়ী হওয়া) উচ্চারণ করতে লাগলেন এবং তিনি মহান আল্লাহ পাক’, ‘মহান আল্লাহ পাক’, ‘মহান আল্লাহ পাকবললেনঅতঃপর পর জিহবা মুবারক তালুর সাথে লেগে গেলএভাবে ৫৬১ হিজরী সনের (১১১৬ ঈসায়ী) ১১ই রবীউছ ছানী মাসে মাহবূবে সুবহানী, কুতুবে রব্বানী হযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মহিউদ্দীন বড়পীর ছাহিব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি মহান আল্লাহ্ পাক উনার মহান দরবার শরীফ-এ প্রত্যাবর্তন করলেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)
হযরত গাউছুল আযম শায়েখ সাইয়্যিদ মুহিউদ্দীন আব্দুল কাদির জিলানী রহমতুল্লাহি আলাইহি ক্রমান্বয়ে চারটি বিবাহ করেছিলেনউনাকে বিবাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন যে, আখিরী রসূল, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশ মুবারকে বিবাহ করেছেনউনার মোট ৪৯ জন সন্তান-সন্ততি ছিলেনউনাদের মধ্যে ২৭ জন পুত্র সন্তান এবং ২২ জন মেয়ে সন্তান ছিলেনউনারা সকলেই অতি উঁচু দরজার ওলীআল্লাহ্ ছিলেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন