শনিবার, ৭ মার্চ, ২০১৫

সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক

সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি 


আলাইহি উনার সংক্ষিপ্ত জীবনী মুবারক

হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী তিনি ৬৩৩ হিজরী ৬ রজবুল হারাম শরীফ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন তিনি চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত পরিচিত করেন

সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি  হলেন চিশতীয় ধারার ভারতীয় উপমহাদেশের সবচেয়ে আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী তিনি ৬৩৩ হিজরী ৬ রজবুল হারাম শরীফ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন তিনি চিশতীই উপমহাদেশে প্রথম এই ধারা প্রতিষ্ঠিত পরিচিত করেন


উনার  পিতার নাম হযরত খাজা গিয়াসুদ্দীন রহমতুল্লাহি আলাইহি

 হাসান মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ ওলী ছিলেন খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি

 মাত্র ১৫ বছরবয়সে পিতৃহীন হন পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেন ইব্রাহিম কান্দুযী রহমতুল্লাহি আলাইহি

 নামক একজন মজ্জুববুযুর্গের সংস্পর্শে এসে উনার জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় তিনি উনার ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন
খাজা সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি  মাত্র ১৫ বছর বয়স মুবারকে পিতৃহীন হন পৈতৃকসূত্রে তিনি একটি ফলের বাগান লাভ করেছিলেনহযরত  ইব্রাহিম কান্দুযী রহমতুল্লাহি আলাইহি   নামক একজন মজ্জুব বুযুর্গের সংস্পর্শে এসে উনার  জীবনে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় তিনি উনার ফলের বাগান অন্যদের দান করে দুনিয়াত্যাগী একজন সাধক হিসাবে নতুন জীবন শুরু করেন


 তিনি ভারতে চিশতী ধারার মাধ্যমে আধ্যাত্মিক ধারা বা সিলসিলা এমনভাবে পরিচিত করেন পরবর্তীতে তার অনুসারীরা যেমনকুতুব উল আক্তাব হযরত খাজা সাঈদ মুহাম্মদ কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকি রহমতুল্লাহি আলাইহি হজরত খাজা বাবা ফরীদুদ্দীন মাসঊদ গঞ্জে শকর রহমতুল্লাহি আলাইহি , সুলতান উল মাশায়েখ , মেহবুব ইলাহী , হযরত শায়খ খাজা সৈয়দ মুহাম্মদ নিজামুদ্দিন আউলিয়া রহমতুল্লাহি আলাইহি সহ (প্রত্যেকে ক্রমানুযায়ী পূর্ববর্তীজনের শিষ্য) আরো অনেকে ভারতের ইতিহাসে সুফি ধারা এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যানসুবহানাল্লাহ!

ধারনা করা হয় সুলতান-উল-হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ খাজা মইনুদ্দিন চিশতি রহমতুল্লাহি তিনি ৬৩৩ হিজরী ৬ রজবুল হারাম শরীফ বিলাদতী শান মুবারক প্রকাশ করেন তিনি পারস্যে বেড়ে উঠেন পনের বছর বয়সে উনার পিতা-মাতা পর্দা করেন তিনি উনার পিতার কাছ থেকে একটি বাতচক্র (উইন্ডমিল) একটি ফলের বাগান উত্তরাধিকারসূত্রে লাভ করেন কিংবদন্তী অনুসারে, একদিন তিনি তার ফলবাগানে পানি দিচ্ছিলেন তখন তার ফলবাগানে আসেন বিখ্যাত সুফি হযরত শেখ ইব্রাহিম কুন্দুজী   রহমতুল্লাহি আলাইহি (কুন্দুজী নামটি জন্মস্থান কুন্দুজ থেকে এসেছে). যুবক হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি  তটস্থ হয়ে যান এবং হযরত কুন্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি কে কিছু ফল দিয়ে আপ্যায়ন করেন এর প্রতিদানস্বরুপ  হযরত কুন্দুজী রহমতুল্লাহি আলাইহি হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি কে এক টুকরা রুটি দেন তা খেতে বলেন এই পর তিনি তার সম্পত্তি এবং অন্যান্য জিনিসপত্র গরীবদের মাঝে বিতড়ন করে দেন এরপর তিনি বিশ্বের মায়া ত্যাগ করে জ্ঞনার্জন উচ্চ শিক্ষার জন্য বুখারার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন

সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি বোখারা থেকে নিশাপুরে আসেন সেখানে চিস্তিয়া তরীকার অপর প্রসিদ্ধ ছুফি সাধক খাজা উসমান হারুনীর রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার   নিকট বায়াত গ্রহণ করেন উনার সেবায় ২০ বছর একাগ্রভাবে নিয়োজিত ছিলেন পরে উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনাকে খেলাফত  প্রদান করেন

একবার তিনি এক এলাকা দিয়ে সফর করছিলেন এমন সময় দেখতে পেলেন পথিমধ্যে একটি হুজরা শরীফ দেখা যাচ্ছে সেই হুজরা শরীফ-উনার দরজা খোলা রয়েছে সেই ঘরের ভিতরে একজন আল্লাহ পাক উনার ওলী বসে রয়েছেন হযরত গরীবে নেওয়াজ হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি উনার দিকে সেই ওলীআল্লাহ তিনি তাকালেন এবং উনাকে হাত দিয়ে ইশারা করে ডাক দিলে হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি হুজরা শরীফ-উনার ভিতরে ঢুকার পূর্বে দেখতে পেলেন হুজরা শরীফ-উনার দুদিকে দুটি বাঘ বসে রয়েছে তিনি ফিকির করলেন নিশ্চয়ই বাঘ দুটি আল্লাহ পাক উনার ওলী উনার খাদিম হবে এরপর তিনি ঘরের ভিতরে প্রবেশ করলেন যখন তিনি ভিতরে প্রবেশ করলেন তখন সেই আল্লাহ পাক উনার ওলী বললেন, হে বাবা! আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি মহান আল্লাহ পাক উনার উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের সন্তুষ্টি হাছিলের লক্ষ্যে মশগুল রয়েছেন তাহলে আপনি দুটি নছীহত সব সময় মনে রাখবেন যা আপনার জীবনে কাজে লাগবে
প্রথম নম্বর হচ্ছে, আপনি মহান আল্লাহ পাক উনাকে ছাড়া কোনো মাখলুকাতকে ভয় করবেন না, একমাত্র মহান আল্লাহ পাক উনাকেই ভয় করবেন দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মহান আল্লাহ পাক উনার কাছেই সমস্ত কিছু চাবেন বেশি বেশি আরজি দোয়া করবেন হাদীছ শরীফ- রয়েছেযে চায় সে পায়আর যে চায় না সে কি করে নিয়ামত পেতে পারে হযরত গরীবে নেওয়াজ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, এই দুটি নছীহত মুবারক আমার অনেক কাজে লেগেছে সুবহানাল্লাহ!

উনার জীবনী মুবারকে বর্ণিত রয়েছে, তিনি যখন মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নির্দেশক্রমে হিন্দুস্থানে তাশরীফ আনলেন তখন হিন্দুস্থানের রাজা ছিল পৃথ্বীরাজ ওই মুহূর্তে হিন্দুস্থানের প্রায় সমস্ত মানুষই ছিল বিধর্মী কিন্তু হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি ওই সমস্ত বিধর্মীদেরকে ভয় পাননি একাই সমস্ত বাতিল, কুফরী, শিরকী, সমূলে মূলোৎপাটন করে গোটা হিন্দুস্থানে ইসলাম জারি করলেন এবং এক কোটিরও বেশি বিধর্মী উনার মুবারক হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে খাঁটি মুসলমান হয়ে যায় সুবহানাল্লাহ

স্মরণীয় যে, হযরত খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার ফাযায়িল-ফযীলত বেমেছাল এমন ব্যক্তিত্ব যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনারা স্বয়ং লক্বব মুবারক দিয়েছেনইয়া কুতুবাল হিন্দ, ইয়া কুতুবাল মাশায়িখ উনার বিছাল শরীফ-এর পর উনার কপাল মুবারকে কুদরতীভাবে লিখা উঠেছিলোহাযা হাবীবুল্লাহ মাতা ফি হুব্বিল্লাহঅর্থাৎ তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতে বিছাল শরীফ লাভ করেছেন সুবহানাল্লাহ!

হযরত গরীবে নেওয়াজ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি  বহু দেশ ভ্রমণ করেন তৎকালীন বিভিন্ন জ্ঞানী, গুণী, পন্ডিত, দার্শনিকসহ অসংখ্য ছুফি সাধকের সাথে সাক্ষাত করেন বলে নানা গ্রন্থে তথ্য পাওয়া যায় তিনি ইরাকের বাগদাদে হযরত বড় পীর রহমতুল্লাহি আলাইহি   সাহচর্যে ৫৭ দিন অবস্থান করেন উনার জীবনীতে বর্ণিত আছে যে, সময় হযরত বড় পীর রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনাকে উদ্দেশ্য করে বলছিলেন, ইরাকের দায়িত্ব হযরত শায়েক শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমতুল্লাহি আলাইহি   উনাকে কে আর হিন্দুস্থানের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলো একই সংবাদ নিজ পীর  হযরত খাজা ওসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি   উনার  সাথে পবিত্র মদীনা শরীফ অবস্থান জিয়ারতকালে মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার পক্ষ থেকে পেয়েছিলেন তিনি আরব হতে ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে প্রথমে লাহোর পরে দিল্লী হয়ে আজমিরে বসতি স্থাপন করেন

হযরত গরীবে নেওয়াজ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি চিশতী ছিলেন পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে কিংবদন্তিতুল্য একজন ঐতিহাসিক ছুফি ব্যক্তিত্ব তিনি স্বীয় পীর হযরত উসমান হারুনী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার মুবারক নির্দেশে ভারতে আগমন করে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং উনার মাধ্যমে এক (১) কোটির ও বেশি  ইসলাম গ্রহণ করেনসুবহানাল্লাহ!

তিনি  হযরত খাজা কুতুবুদ্দীন বখতিয়ার কাকী রহমতুল্লাহি আলাইহি  উনাকে খিলাফতের দায়িত্ব অর্পন করে সিলসিলার ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখেন

হযরত গরীবে নেওয়াজ খাজা হাবীবুল্লাহ রহমতুল্লাহি আলাইহি  ৬৩৩ হিজরীর রজব দিবাগত রাত অর্থাৎ রজব সূর্যোদয়ের সময় পর্দা গ্রহন করেন  তিনি যখন বিছালী শান মুবারক প্রকাশ করেন উনার কপাল মুবারকে সোনালী অক্ষরে কুদরতী ভাবে লেখা উঠেছিল হা-যা হাবীবুল্লাহ মা-তা ফী হুব্বিল্লাহতিনি মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীব, তিনি মহান আল্লাহ পাক উনার মুহব্বতেই বিছাল শরীফ লাভ করেন সুলতানুল হিন্দ, গরীবে নেওয়াজ, হযরত খাজা ছাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি সুন্নতের পরিপূর্ণ অনুসরণ করার কারণেইহাবীবুল্লাহলক্বব মুবারক লাভ করেন

তখন উনার বয়স মুবারক হয়েছিল ৯৭ বছর উনার  বড় ছেলে খাজা ফখরুদ্দীন চিশতী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন প্রতিবছর ১লা রজব হতে রজব পর্যন্ত আজমির শরীফে উনার  সমাধিস্থলে ওরছ মুবারক অনুষ্ঠিত যাতে নানা ধর্ম, বর্ণ গোত্রের মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ হতে সমবেত হয়

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন